কিডনি বেচে চলে সংসার
জাহিদ বিন মনির
আমার বোনের জামাই আমাকে বলল, মানুষের শরীরে দুটো কিডনির দরকার হয়না; একটা হলেই চলে। আমার বোন আমার কিডনি চুরি করল আর ভূমিকম্প চুরি করল আমার ঘর।
নেপালী মহিলা গীতার জীবনে এই বাংলা প্রবাদটি বেশ প্রযোজ্য, বিপদ যখন আসে তখন চারদিক থেকেই আসে।
নেপালের এই গ্রামের নাম হোগসে; যেখানে গীতার মতো হাজারো দরিদ্র অসহায় মানুষের বাস। এ গ্রামটি এখন আর হোগসে নামে নয়; কিডনি গ্রাম নামেই বেশি পরিচিত।
এখানকার অধিকাংশ মানুষ একটা কিডনি নিয়েই চলছে! ছোট-বড়-বৃদ্ধ সবার একই অবস্থা। কয়েক দশক ধরে এই গ্রামে এভাবেই চলে আসছে। কিন্তু কেন?
নিত্যদিনের দারিদ্রতাকে সঙ্গী করে অনেকের মতোই এই গ্রামবাসীর পথচলা। আর এই পরিস্থিতির সুযোগ নিতে হাজির হয় একদল অসাধু চক্র। না, কোনো মাদক পাচার কিংবা কোনো মানব পাচারের জন্য নয়। কিডনি কেনার জন্য! এই অসাধু চক্রটি গ্রামবাসীদের মোটা টাকার লোভ দেখিয়ে কিডনি বিক্রিতে উৎসাহ দিতে শুরু করে। সেই ফাঁদে পা দেন গ্রামবাসীরা। শুরু হয় কিডনি বিক্রির হিড়িক। একটি কিডনি বিক্রি করে যদি হাতে মোটা টাকা আসে তাতে ক্ষতি কী! এই চিন্তা করেই কিডনি বিক্রির খাতায় নাম লেখাতে শুরু করেন যুবক-যুবতী থেকে শুরু করে বৃদ্ধরাও। কেউ হাতে পেয়েছেন লাখ টাকা, কেউবা ৮০ হাজার।
কিডনি গ্রামের লোকজন জানান, টাকার অঙ্কটা লাখের মধ্যেই সীমাবদ্ধ। কেতন তামাঙ্গ নামের একজন বলেন, ছোট্ট একটা অস্ত্রোপচার। দুদিন পর বুঝাই যাবে না যে, শরীরের একটা অংশ অস্ত্রোপচার করে বের করা হয়েছে।
এই কিডনি বিক্রিটা নাকি সেখানে এখন প্রায় রীতিতে পরিণত হয়েছে। যখনই টাকার দরকার হয় বাড়ির কোনো না কোনো সদস্য কিডনি বিক্রি করেন। এ প্রসঙ্গে কেতন তামাঙ্গ বলেন, ‘জীবনের ঝুঁকিতো রয়েছেই কিন্তু এ কাজে মোটা টাকা পাওয়া যাচ্ছে। তাই কিডনি বিক্রির হিড়িক বাড়বে না কেন!’
প্রতিক্ষণ/এডি/জেবিএম